নিউজ ডেস্কঃ এসআর গ্রুপের অঙ্গগ প্রতিষ্ঠান দুই হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট ফুড ভিলেজ লিমিটেড ও ফুড ভিলেজ প্লাস। দুইটি রেস্টুরেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলেে জানা গেছে।
সম্প্রতি দুইটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
এই দুটি রেস্টুরেন্টের মালিক বগুড়া-৬ সদর আসনের সাংসদ (এমপি) গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক।
সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দার বিশেষ অভিযানে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক জানান, এসআর গ্রুপের দুইটি হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। দুইটি প্রতিষ্ঠান হলো-ফুড ভিলেজ লিমিটেড, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার শেরপুর। অন্যটি ফুড ভিলেজ প্লাস। একই মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে অবস্থিত।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত১৪ সেপ্টেম্বর ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও ফেরদৌসী মাহবুব এর নেতৃত্বে একটি দল নিকুঞ্জ-১ এলাকার এসআর গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানর বাণিজ্যিক হিসাবপত্র জব্দ করে। এসব জব্দকৃত কাগজপত্র যাচাই করে ভ্যাট গোয়েন্দার দল দেখতে পায় উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠানের দুটো হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছে।
সিরাজগঞ্জ ভ্যাট সার্কেল অফিসের তথ্যে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত তিনবছর ৬ মাসে ফুড ভিলেজ প্লাস রেস্টুরেন্টে বিক্রয় প্রদর্শন করেছে ২৩ কোটি ১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা।
কিন্তু জব্দকৃত কাগজে দেখা যায়, প্রকৃত বিক্রয়ের পরিমাণ ১২৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফুড ভিলেজ প্লাস একই সময়ে বিক্রয় গোপন করেছে ১০০ কোটি টাকা। এখানে ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে সুদ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।
ড. মইনুল খান জানান, একই মালিকানাধীন ফুড ভিলেজ লিমিটেড ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত তিনবছর ৫ মাসে মাসিক ভ্যাট রিটার্নে বিক্রয় দেখানো হয়েছে ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে ভ্যাট দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৫১ লাখ টাকা।
তবে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানে এই সময়ে ফুড ভিলেজ লিমিটেডের প্রকৃত বিক্রয় ১২২.২২ কোটি টাকা পাওয়া যায়।এই তথ্য গোপন করায় ফুড ভিলেজ লিমিটেড কর্তৃক ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৮.৯৩ কোটি টাকা।এতে সুদ আরোপযোগ্য হয়েছে ৩.৯৯ কোটি টাকা।
দুটো রেস্টুরেন্টে প্রকৃত বিক্রয় গোপন করা হয়েছে মোট ১৯৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ভ্যাট রিটার্নে এসআর গ্রুপ প্রায় ৭২% তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই অসৎ উপায়ে তথ্য গোপন করায় সরকার এই দুই রেস্টুরেন্ট থেকে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ভ্যাট থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
রেস্টুরেন্ট দুটো মূলত ঢাকা-রংপুর হাইওয়েতে বাসের যাত্রীদের খাবার পরিবেশন করে। এতে নন-এসি, এসি ডিলাক্সে খাবার বিক্রয় এবং একটি কর্ণারে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় পণ্য বিক্রি করা হয়। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এই অভিযানে দুইটি ছাড়াও দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, সুং ফুড গার্ডেন, এসআর ট্রাভেল ও পার্সেলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রও আটক করা হয়। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট রিটার্নের সাথে আড়াআডি় যাচাই করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।